উপমহাদেশে মহররম পালনের ইতিকথা
---মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী
ইদানিং কালে চাটগামী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা বেরলভী সুন্নী পার্টির নেতা, আলেমরা এতোটা উগ্রপন্থী যা সীমা অতিক্রম করে ফতোয়াবাজি করিতেছে। মানুষ এদের এখন চিনতে শুরু করেছে। এরা মুখে সুন্নিয়ত আর আউলিয়া কেরাম ও আহলে বাইতের কথা বললেও এরা মুলত আউলিয়া কেরামের অধিকাংশ আকিদা বিরোধি এবং আহলে বাইতের চরম শত্রু। এদের মুখে সারাদিন আহলে বাইতের শত্রুদের গুণগাণ। উমাইয়া দুনিয়ালোভী শাসক মূয়াবিয়ার গুণগাণ। মহররমের শোক পালনকারীকে এবং আহলে বাইতের কথা বললেই এরা শিয়া ট্যাগ দিতেছে।
এই কথিত সুন্নীরা উপমহাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য উল্টে দিতে চায়। মহররমের শোক, মর্সিয়া, তাজিয়া উপমহাদেশে সকল সুফি দরগাহে পালিত হয়ে আসছে সেই 1200 খ্রিষ্টাব্দ হতে খাজেগানে চিশতিদের মাধ্যমে। একে একে সকল সুফি দরগাহে মহররম পালিত হয়ে আসছে। এছাড়া সেই 1200 সাল থেকে যুগ শ্রেষ্ট সুফি, আউলিয়া কেরাম, যুগ শ্রেষ্ট আলেম ও মুহাদ্দিস, কবি, সাহিত্যিক সবাই মহররমের পক্ষে শোকগাথা মর্সিয়া লিখেছে। অথচ এসব ধামাচাপা দিয়ে এই কথিত সুন্নীরা বলে মহররমের শোক পালন করলে মর্সিয়া করলে শিয়া হয়ে যাবে। কি আজব?
যারা শিয়া শিয়া করে চিল্লাইতেছে তাদের জানা উচিত মহররমে শোক পালন ও মর্সিয়া মাতম পাঠ করলে শিয়া ট্যাগ দিলে শিয়া থেকে উপমহাদেশের ইসলামি অধিকাংশ মনীষি পার পাবে না।
আমি একটি লিষ্ট দিচ্ছি উপমহাদেশে কারা কারা মহররম পালন করতো। যথা-
উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারক সুফি আউলিয়া কেরামের মধ্যে যারা মহররম পালন করতো তাদের মধ্যে অন্যতম
হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি রা
হযরত কুতুবউদ্দিন কাকী রা
হযরত ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর রাঃ
হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া রাঃ
হযরত আমির খশরু রাঃ
হযরত নাসিরউদ্দিন চেরাগে দেহলভী রাঃ
হযরত সৈয়দ শাহ মুরশিদ আলী আল কাদেরী রাঃ (মেদিনীপুর, ভারত)
হযরত সৈয়দ শাহ এরশাদ আলী আল কাদেরী রাঃ (মেদিনীপুর, ভারত)
হযরত সৈয়দ ওয়ারিজ আলী শাহ রাঃ (ভারত)
হযরত সৈয়দ আমীর আবুল-উলা রাঃ ( ভারত)
হযরত লাল শাহবাজ কলন্দর রাঃ (পাকিস্তান)
হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী রাঃ ও 360 আউলিয়া
হযরত নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রাঃ ও তার বংশের অধঃস্তন আউলিয়া কেরাম
হযরত শাহ খলিলুর রহমান রাঃ (গড়পাড়া, মানিকগঞ্জ)
হযরত আব্দুর রশিদ চিশতি রাঃ (ঝিটকা, মানিকগঞ্জ)
ইত্যাদি এভাবে আরও অসংখ্য আউলিয়া কেরামের দরগাহে তৎকালীন কাল থেকে এখনও মহররম পালিত হয়।
উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম ও মুহাদ্দিস যারা মহররমের পক্ষে লিখেছেন এবং নিজেরা মহররমের অনুষ্ঠান করেছেন। যেমন-
হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাঃ
হযরত শায়েখ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রাঃ
হযরত শায়েখ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী রাঃ
হযরত মাওলানা মুহম্মদ আলী জওহর রাঃ
হযরত মাওলানা আবু তাহের আল কাদেরী রাঃ
শামসুল উলামা মাওলানা সফিউল্লাহ দাদাজি রাঃ (হেড মাওলানা, কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, 1927-29)
শামসুল উলামা মাওলানা বেলায়েত হোসেন বীরভূমী রাঃ (হেড মাওলানা, কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, 1942-47)
মাওলানা শাফি হুজ্জাতুল্লাহ আনসারী রাঃ (প্রথম হেড মাওলানা, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা, 1947-49)
মাওলানা মুফতি আমীমুল ইহসান বারকাতী রাঃ (হেড মাওলানা, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা, 1954-69। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রথম খতিব)
ইত্যাদি অসংখ্য যুগশ্রেষ্ট আলেম ও মুহাদ্দিস তৎকালীন একশত দুইশত তিনশত বছর আগেই মহররম পালন করেছেন। লিখেছেন। ওয়াজ করেছেন।
বিগত একশত বছরে অসংখ্য আলেম মুহাদ্দিস মহররম পালন করেছে ও মহররমের পক্ষে ওয়াজ করেছে।
আমি এখানে যেসব আলেম, মাওলানা ও মুহাদ্দিসদের নাম উল্লেখ করেছি এদের নিকট কথিত সুন্নী আলেমরা শিশু বাচ্চা তুল্য।
উপমহাদেশের মুসলিম শ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকদের লিষ্ট দিচ্ছি যারা মহররমের শোকগাঁথা মর্সিয়া মাতম নওহা লিখে গেছেন। মহররমের অনুষ্ঠান করতেন। যথা-
মহাকবি আলাউল
মহাকবি কায়কোবাদ
সৈয়দ সুলতান
সৈয়দ দীনহীন
সৈয়দ আমির আলী
আল্লামা ইকবাল
কাজী নজরুল ইসলাম
ফররুখ আহমদ
মীর মশাররফ হোসেন
ইত্যাদি আরও অনেকেই।
উপমহাদেশের মুঘল সম্রাটগণ রাষ্ট্রীয়ভাবে মহররমের শোক মর্সিয়া তাজিয়া পালন করতো। হাজি মুহাম্মদ মহসিনের নাম শুনেছেন তো। তিনি মুরশিদাবাদে মহররম পালনের জন্য যে বিশাল ইমামবাড়া তৈরি করেছিলেন তা আজও বিদ্যমান। এইভাবে উপমহাদেশের মুসলিম রাজা বাদশাহ ও দানবীরগণ সকলেই মহররম পালন করতো।
আচ্ছা সুন্নী সাহেবরা ছোট একটা লিষ্ট দিলাম। এই সকল সব মনীষি কবি সাহিত্যিক ইসলাম প্রচারক বুঝি শিয়া? এসব মনীষিদের শিয়া ট্যাগ দাও দেখি। উপমহাদেশে ইসলাম থাকবে তো? কারণ সব শিয়া।
শুনেন কথিত চাটগামী আহলে সুন্নাত বেরলভী সুন্নী সাহেবরা। বেশি লাফাইয়েন না। লেখা পড়া একটু করুন। উপমহাদেশে ইসলাম হচ্ছে আহলে বাইতের ভালোবাসা কেন্দ্রিক। মহররম কেন্দ্রিক। তাই মহররম ও আহলে বাইতের বিরুদ্ধে গেলে উপমহাদেশে সুন্নী একটাও থাকবে না।
তাই পরিষ্কার বলছি- কথিত বেরলভী সুন্নীরা হচ্ছে খারেজী। এদের আচরণ অর্ধ ওহাবী অর্ধ সুন্নী। এরা যতই শিয়া শিয়া চিল্লাবে ততই এদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে।
লেখার তারিখঃ ১০/০৭/২০৪, ৪ঠা মহররম ১৪৪৬ হিজরি
লেখক ও গবেষক
মোহাম্মদ তফিজ উদ্দিন কাদেরী
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোহাম্মদ মহররম হোসেন মাহ্দী